প্রশ্ন
বরাবর,
ফাতাওয়া বিভাগ
আশরাফুল মাদারিস, সতীঘাটা, সদর, যশোর
বিষয়: সুদ সম্পর্কিত মাসআলা
মুহতারাম,
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ,
হুজুর আশাকরি আল্লাহর রহমতে সুস্থ আছেন। হুজুর একটা বিশেষ মাসআলার প্রয়োজন ছিল।
হুজুর আমার বাবা ২০০৭ সালে অবসর গ্রহণ করেন চাকরি থেকে। আমরা মোট পাঁচ ভাই, দুই ভাই বাইরে থাকেন এবং পৃথক খান। আর ছোট তিন ভাই আমরা একসঙ্গে থাকি। ছোট তিন ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ভাই আমার বাবা মার সঙ্গে অবস্থান করেন। বাকি দুইজন আমরা চাকরির সুবাদে দুই জায়গায় অবস্থান করি। প্রত্যেক ঈদ অথবা কোন অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে সবাই বাসায় একত্রিত হই এবং আমরা ভাইয়ের ফ্যামিলির সবাই একসঙ্গে খানাপিনা শরিক হই এবং প্রত্যেকেই যার যার সামর্থ্য অনুসারে বাজার সদাই অংশগ্রহণ করে। আমাদের এক ভাই বাংলাদেশের একটি কুখ্যাত সুদি ব্যাংকে চাকরি করেন এবং উনিও প্রত্যেক মাসে আমাদের ফ্যামিলিতে অর্থ কন্ট্রিবিউট করেন। এখন হুজুর সমস্যা হল আমি আমার বাবাকে বা ভাইকে বুঝাইতে পারি না যে সুদি ব্যাংকের ইনকাম হালাল না। আমি মন থেকে চাই তারা যেন জিনিসটাকে বুঝে। আমার বাবা অবসরের পর থেকে ওনার ইনকাম সোর্স নেই। আমাদের ফ্যামিলিতে সবাই কমবেশি কন্ট্রিবিউট করে কিন্তু আত্মীয়র রক্ষার সুবাদে প্রত্যেককে সবকিছু মেনে চলতে হয়। হুজুর আমার ব্যাংকার ভাই যে আমার বাবাকে প্রত্যেক মাসে কিছু টাকা দেয় এটা সুরত কি হতে পারে বা কোন হেকমত অবলম্বন করা যায় কিনা? সামনে কোরবানি ঈদে আমরা ভাইয়েরা মিলে গরুর কুরবানী দিব ইনশাআল্লাহ, এক্ষেত্রে ওনার অংশগ্রহণ কিভাবে হতে পারে বা পারে না? জাযাকাল্লাহ খাইরান।
উত্তর
ফাতাওয়া নম্বর: ৭৭১
যেমনভাবে সুদ হারাম বা নাজায়েয হওয়ার কারণে ইসলাম তার অনুমোদন দেয় না। তেমনিভাবে সুদভিত্তিক কোন লেনদেনে জড়িত হওয়া বা এ কাজে সাহায্য সহযোগিতা করাও জায়েয নয়। সুতরাং সুদী ব্যাংক/প্রতিষ্ঠানে চাকরীর বিনিময়ে অর্জিত অর্থও হালাল হবে না।
অতএব, প্রশ্নোক্ত সুরতে সুদী অর্থ ও তা দ্বারা অর্জিত বস্তু থেকে নিজেকে পূর্ণ রক্ষা করতে হবে। আর পূর্বে এর থেকে উপকার গ্রহণের কারণে তাওবা ও ইস্তেগফার করবে এবং সাধ্যানুযায়ী নিজের পিতা ও ভাইদেরকে সুদের খারাবী ও ভয়াবহতা বোঝাবে। এতে যদি তারা ফিরে আসে তো ভাল। অন্যথায় এর দায়ভার তাদের উপরই বর্তাবে।তবে যদি আপনার ভাই ও পিতা শুধুমাত্র এই চাকরীর উপরই নির্ভরশীল হয় তাহলে সে এ মূহুর্তেই চাকরী না ছেড়ে ইস্তিগফার করবে এবং উপার্জনের কোন হালাল পন্থা তালাশ করতে থাকবে। হালাল পথ খোলার আগ পর্যন্ত কোন অমুসলিম থেকে ঋণ নিয়ে পরিবারের খরচ সমাধা করবে এবং চাকরীর টাকা দিয়ে সে ঋণ পরিশোধ করবে। জীবিকা নির্বাহের হালাল কোন পন্থা পেলেই ব্যাংকের চাকরী ছেড়ে নতুন চাকরী গ্রহণ করবে। অতঃপর সাধ্যানুযায়ী ধীরে ধীরে ব্যাংক থেকে উপার্জিত অর্থ সদকা করে দিবে। – সূরা বাকারা, আয়াত ২৭৫-২৭৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৯৮; রদ্দুল মুহতার ৭/৪১৩; আহসানুল ফাতাওয়া ৭/২২; ফাতাওয়ায়ে উসমানী ৩/৩৯৬;
ফাতাওয়া নম্বর:৭৭২
যদি কারো ইনকাম সোর্স পরিপূর্ণই সুদভিত্তিক হয় এবং তার অন্য কোন হালাল উপার্জন না থাকে তাহলে এমন ব্যক্তি কুরবানীতে শরীক হওয়ার দ্বারা কারোরই কুরবানী সহীহ হবে না।সুতরাং প্রশ্নোক্ত সুরতে যদি আপনার ভায়ের ব্যাংক থেকে উপার্জিত অর্থ ব্যতিত ভিন্ন কোন হালাল ইনকাম সোর্স না থাকে তাহলে কুরবানীতে তার সাথে একই পশুতে শরীক হওয়া যাবে না। প্রয়োজনে একাই একটি ছাগল কুরবানী করবেন অথবা এমন পশুতে শরীক হবেন যেখানে শরীকদের মধ্যে কারোরই উপার্জিত অর্থ হারাম নয়। – সূরা বাকারা, আয়াত ১২৭; মাজমাউয যাওয়ায়েদ ওয়া মানবাউল ফাওয়ায়েদ, হাদীস ৪৬২৩; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬; আহসানুল ফাতাওয়া ৭/৫০৩; ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ ১৫/৫৫৮;
উত্তর লিখনে
ফাতাওয়া বিভাগ
আশরাফুল মাদারিস (সতীঘাটা মাদরাসা)
সতীঘাটা, সদর, যশোর, বাংলাদেশ